dailybanglavoice.com
দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সপ্তম শ্রেণিতে পাঠ্য ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান বইয়ে ‘শরীফ ও শরীফা’র গল্প নিয়ে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের (ফিলোসফির খণ্ডকালীন) শিক্ষক আসিফ মাহতাবের সমালোচনার পর, বিষয়টি নিয়ে সরগরম অনলাইন-অফলাইন। চরম বিতর্ক দেখা দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও সাধারণ জনতার মধ্যে।
এ বিষেয় এবার মন্তব্য করেছেন জনপ্রিয় দুই ইসলামি আলোচক শায়খ আহমাদুল্লাহ ও মালয়েশিয়া প্রবাসী মাওলানা মিজানুর রহমান আজহারী। অপরদিকে, পাঠ্য বই থেকে শরীফ ও শরীফার গল্প বাদ দিতে আইনি নোটিশ পাঠিয়েছেন, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মো. মাহমুদুল হাসান।
এ দিকে ট্রান্সজেন্ডার ইস্যুতে দীর্ঘ মন্তব্য করেছেন, শায়খ আহমাদুল্লাহ। তিনি বলেছেন, ‘ট্রান্সজেন্ডার নামের এক ভয়ংকর ফেতনা ঝড়ের মতো ধেয়ে আসছে বাংলাদেশের দিকে। এর প্রবর্তকেরা পৃথিবীবাসীকে এমন এক পথের দিকে আহ্বান করছে যেখানে শরীর নয়, মনই ব্যক্তির আসল লিঙ্গ-পরিচয়। অর্থাৎ একজন পুরুষের মন যদি বলে সে নারী, তবে সে নারী। আবার একজন নারীর মন যদি বলে সে পুরুষ, তবে সে পুরুষ। এই ফেতনা প্রতিষ্ঠিত হলে হাজার বছর ধরে প্রতিষ্ঠিত পৃথিবীর লিঙ্গভিত্তিক ব্যবস্থাপনা ওলোট-পালোট হয়ে যাবে। এর ফলে যে চরম সামাজিক অস্থিরতা ও বিশৃঙ্খলা তৈরি হবে এতে কোনো সন্দেহ নেই। ইতোমধ্যে তার কিছু নমুনা দেখা যাচ্ছে’।
তিনি বলেন, ‘সম্পদ বণ্টন, বিবাহ ও মোহরানা, শিক্ষাঙ্গনে ভর্তি, হোস্টেল যাপন, পাবলিক টয়লেট ব্যবহার ইত্যাদি বিষয় নিয়ে তৈরি হবে ভয়ঙ্কর গোলযোগ। বাবার সম্পত্তি বেশি পাওয়ার জন্য কন্যা নিজেকে পুত্র দাবি করবে। ছাত্রীদের হোস্টেলে রাত্রিযাপনের জন্য কোনো পুরুষ নিজেকে নারী দাবি করলেও অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। ভিড়ের বাসে নারীকে বাজে স্পর্শ করার পর পুরুষ লোকটি বলবে, আমি নারী। ভুল দেহে আটকে পড়ে আছি। আমার এ স্পর্শ নারীর সাথে নারীর স্পর্শের মতো। ইতোমধ্যে স্কটল্যান্ডের জেলখানার নারী সেলে তথাকথিত ‘ভুল দেহে আটকা পড়া’ এমন এক রূপান্তরিত নারী (আসলে পুরুষ) কর্তৃক ধর্ষণের শিকার হয়েছে এক নারী কয়েদি’।
‘অথচ বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথমবারের সরকারি কর্মজীবী মহিলা হোস্টেলে নিজেকে নারী দাবি করা এক পুরুষের জন্য সিট বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এখানেও যে স্কটল্যান্ডের মতো ঘটনা ঘটবে না তার কী গ্যারান্টি আছে? এমন প্রশ্ন রাখেন তিনি। অথচ এই শৃঙ্খলা ধসে গেলে পৃথিবী থেকে মানবসভ্যতা বিলুপ্ত হতে খুব বেশি সময় লাগবে না। তাই আমাদের নিজেদের স্বার্থেই এই অসুস্থ অনাচারের বিরুদ্ধে সামাজিক প্রতিরোধ ও সচেতনতা গড়ে তুলতে হবে বলে মন্তব্য করেন শায়খ আহমাদুল্লাহ’।
অপরদিকে, একই ইস্যুতে কুরআন ও হাদিসের উদ্ধৃতি উল্লেখ করে, মাওলানা মিজানুর রহমান আজহারী নিজের ফেসবুক পেইজে বলেছেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ওই সব পুরুষকে লানত করেছেন, যারা নারীর সাদৃশ্য ধারণ করে এবং ওইসব নারীকে যারা পুরুষের সাদৃশ্য ধারণ করে-(বুখারি, হাদিস, ৫৮৮৫)। কুরআনের সূরা নিসার একটি আয়াতে শয়তানের বক্তব্যের উদ্ধৃতি দিয়ে তিনি উল্লেখ করেন, ‘আমি (শয়তান) অবশ্যই তাদেরকে আদেশ দেব যার ফলে তারা আল্লাহর সৃষ্টি বিকৃত করবেই। তবে যে আল্লাহর পরিবর্তে শয়তানকে অভিভাবকরূপে গ্রহণ করেূ, সে স্পষ্টতই ক্ষতিগ্রস্ত হয়-(সূরা নিসা, আয়াত, ১১৯)।
মনে মনে নিজেকে মেয়ে ভাবার বিষয়টির ব্যাখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, ‘কোন শিয়াল যদি বলে-“আমি নিজেকে মুরগি মনে করি”, তাহলে কি শিয়ালকে মুরগির সাথে রাখা যাবে? অবশ্যই না। রাখলে মুরগি যেমনি তার অস্তিত্ব হারাবে, ঠিক তেমনি এই রূপান্তর মতবাদের কারণে নারী-পুরুষের প্রাকৃতিক বাইনারিও অস্তিত্ব হুমকিতে পড়বে।’ অতএব, ‘আমাদের কোমলমতি শিশুদের ফিতরাত কলুষিত করার মানব অস্তিত্ব বিধ্বংসী এই মতবাদকে স্পষ্ট ভাষায় ‘না’ বলুন। দল-মত,ধর্ম,বর্ণ নির্বিশেষে সরব প্রতিবাদ করুন।
==============