dailybanglavoice.com
পবিত্র আখেরি চাহার শোম্বা ৪ সেপ্টেম্বর (বুধবার)। এই দিন বিশ্ব মানবতার মুক্তির কান্ডারী শেষ নবী হজরত মুহাম্মদ সা.-এর রোগমুক্তি দিবস। যা দীর্ঘদিন থেকে মুসলিম উম্মাহ অত্যন্ত সম্মান ও ভাব গাম্ভীর্যের মধ্য দিয়ে পালন করে আসছে। এ উপলক্ষে দেশে-বিদেশে মুসলিম ধর্মাবলম্বীরা আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিলসহ নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করে থাকে। ঢাকায় বাদ জোহর ইসলামিক ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে, বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদেও বিভিন্ন কর্মসূচী রাখা হয়েছে।
ফারসি ভাষায় ‘আখের’ অর্থ শেষ, আর ‘চাহার শোম্বা’ অর্থ বুধবার। অর্থাৎ হিজরি সনের সফর মাসের শেষ বুধবারকেই আখেরি চাহার শোম্বা বলা হয়। এ দিনে নবিজি (স.) শেষ বারের মতো রোগ থেকে মুক্ত হয়ে আল্লাহর শোকর আদায় করেছিলেন বলে, প্রতি বছর মুসলমানরা শুকরিয়ার দিবস হিসেবে দিনটি পালন করে থাকেন। ওই দিন গোসল করে নামাজে ইমামতি করেন তিনি। তাঁর সুস্থতার খবরে সাহাবিরা উচ্ছ্বসিত হয়ে অনেক দান-খয়রাত করেন। তবে পরদিন তিনি আবার অসুস্থ হয়ে পড়েন।
উল্লেখ্য, রসুলুল্লাহ (স.)-এর জীবনের প্রতিটি কথা ও কাজ, তাঁর সব আচরণ, প্রতিটি পদক্ষেপ তথা সমগ্র জীবনই সর্বোত্তম আদর্শ হিসেবে অনুকরণীয় অনুসরণীয়। মক্কি জীবনের ১৩ বছর তাঁকে নির্মম নির্যাতন ও প্রতিকূলতার মধ্য দিয়ে কাটাতে হয়েছে। হিজরতের পর মদিনায় গিয়েও তাকে ইহুদি-মোনাফেকদের নতুন ষড়যন্ত্রের শিকার হতে হয়েছে। মক্কার কাফেররা মদিনার ইহুদি মোনাফেকদের যোগসাজশে তাকে অশান্তিতে রেখেছিল। নানা কৌশলে তার প্রাণনাশের চেষ্টা পর্যন্ত করেছে।
বিভিন্ন বর্ণনায় জানা গেছে, ৭ম হিজরিতে হুদায়বিয়ার সন্ধির পর মুহরম মাসে ইহুদিদের একটি চক্র ‘লবিদ ইবনে আসম’ যিনি জাদুবিদ্যায় খুব পারদর্শী ছিলেন, তাকে দিয়ে তারা মুহাম্মদ (স.)-কে জাদু করান। লবিদ কৌশলে নবিজির এক ইহুদি গোলামের মাধ্যমে তার ব্যবহৃত চিরুনি ও চুল সংগ্রহ করে। তারপর মোমের একটি পুতুল বানিয়ে তাতে ১১টি সুচ বিদ্ধ করে একটি সুতায় কুফরি মন্তর পড়ে ১১টি গিট দেয়। সবকিছু পুতুলটির মধ্যে রেখে একটি কূপে পাথরের নিচে চাপা দিয়ে রেখে দেয়। এই জাদুর প্রভাবে রসুলুল্লাহ (স.) শারীরিকভাবে খুব অসুস্থ হয়ে পড়েন।
অতঃপর হজরত জিবরাইল (আ.) সুরা ফালাক ও সুরা নাস নিয়ে অবতীর্ণ হন। এ দুইটি সুরার আয়াতসংখ্যা ১১। মহান আল্লাহ ওহির মাধ্যমে তার প্রিয় হাবিবকে জানিয়ে দেন—ইহুদি লবিদ আপনাকে জাদু করেছে, আপনি অমুক কূপ থেকে জাদুর সরঞ্জাম তুলে তাতে এই সুরা দুইটির একেকটি আয়াত পাঠ করে ফুঁক দিতে থাকুন। নবিজি হযরত আলী (রাযি.)-এর মাধ্যমে জাদুর সব সরঞ্জাম উদ্ধার করে সুরা ফালাক ও নাসের ১১টি আয়াত পর্যায়ক্রমে পাঠ করালে জাদুর কার্যকরিতা নষ্ট হয়ে যায়, এতে তিনি দ্রুত আরোগ্য লাভ করেন। এরপর নবী (স.) গোসল করেন এবং বলেন আমার শরীরটা এখন অনেক হালকা মনে হচ্ছে, আমি নিজেকে পূর্ণ সুস্থ মনে করছি। এই দিনটি ছিল সফর মাসের শেষ বুধবার।
নবিজির সুস্থতার খবর পেয়ে একে একে স্ত্রীগণ তার কাছে আসেন, মেয়ে ফাতেমাতুজ জোহরা (রাযি.), ইমাম হাসান ও হুসাইন (রাযি.)-কে নিয়ে উপস্থিত হন। বিশিষ্ট সাহাবায়ে কেরাম নবিজির হুজরার কাছে এসে ভিড় জমান। নবিজি আবেগজড়িত কণ্ঠে সবাইকে বলেন, ‘হে আমার প্রিয় সাহাবি ও ভ্রাতৃবৃন্দ! আমার মৃত্যুর পর, আমার বিয়োগে তোমাদের অবস্থা কীরূপ হতে পারে?’ এ কথা শুনে সবাই কাঁদতে আরম্ভ করেন। তিনি সবাইকে সান্ত্বনা দিয়ে বলেন, কেউ চিরকাল থাকে না, আমাকেও আমার রবের হুকুম মানতে হবে, তার কাছে যেতে হবে। এরপর তিনি মসজিদে নববিতে প্রবেশ করে হযরত আবু বকর সিদ্দিককে (রাযি.) ইমামতি করার নির্দেশ করেন। রাসূল (স.)-এর জীবদ্দশায় আবু বকর (রাযি.)-কে দিয়ে ইমামতি করিয়ে তিনি ইঙ্গিত করলেন যে, আমার ইন্তেকালের পর তোমাদের প্রথম খলিফা হবেন, আমার প্রিয় সাথি আবু বকর (রাযি.)।
নবিজিকে পূর্ণ সুস্থ দেখে সাহাবায়ে কেরাম খুবই আনন্দিত হন, প্রত্যেকে নিজ সামর্থ্য অনুযায়ী দান-সাদকা করেন। হজরত আবু বকর (রাযি.) তৎকালীন সময়ে ৫ হাজার দিনার গরিবদের দান করে দেন। হজরত উমার ফারুক (রাযি.) ৭ হাজার দিনার সাদকাহ্ করেন। হজরত ওসমান গনি (রাযি.) করেছিলেন ১০ হাজার দিনার। হযরত আলি (রাযি.) দান করেন ৩ হাজার দিনার। সাহাবী আব্দুর রহমান ইবনে আউফ (রাযি.) এই খুশির সংবাদে ১০০ উট আল্লাহর রাস্তায় দান করেন। এক কথায় বলা যায়, নবি (স.)-এর প্রতি তাদের ভালোবাসা ছিল নিখাদ ও অতুলনীয়।